আধুনিক জীবনের ব্যস্ততা, প্রযুক্তি নির্ভরতা ও মানসিক চাপের কারণে এখন ঘুম যেন অনেকের কাছেই এক দূরূহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। দিন দিন অনিদ্রা বা ইনসমনিয়ার হার বেড়েই চলেছে। এমন অবস্থায় অনেকেই ভরসা রাখছেন ঘুমের ওষুধে, যা দীর্ঘমেয়াদে শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। অথচ সহজ কিছু ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করলেই মাত্র কয়েক মিনিটেই মিলতে পারে আরামদায়ক ঘুম।
ঘুম শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং শরীর থেকে টক্সিন জাতীয় ক্ষতিকর পদার্থ বের করে দেয়। ফলে মন এবং শরীর উভয়ই কর্মক্ষম থাকে। তবে বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় অতিরিক্ত সময় ব্যয় এবং প্রযুক্তি আসক্তির ফলে অনিদ্রা মারাত্মক আকার নিচ্ছে।
প্রতিদিন রাতের নিরবচ্ছিন্ন ঘুম একজন মানুষের সুস্থ জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইনসমনিয়া বা অনিদ্রা শুধু রাতে ঘুম না আসার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এটি ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ এবং ওজন বৃদ্ধির মতো রোগের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
জার্নাল সাইন্সে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘমেয়াদি অনিদ্রার সঙ্গে স্মৃতিভ্রংশতা (ডিমেনশিয়া) এবং বিষণ্নতার (ডিপ্রেশন) সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। কোনো ব্যক্তি যদি টানা ১১ দিন না ঘুমান, তাহলে তার স্বাভাবিক আচরণ, কাজের দক্ষতা মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হয়। এর ফলশ্রুতিতে শর্ট টার্ম মেমোরি লস, হ্যালুসিনেশন এমনকি মস্তিষ্ক বিকৃতি পর্যন্ত দেখা দিতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ঘুমের জন্য ওষুধের ওপর নির্ভর না করে প্রাকৃতিক উপায়ে ঘুম আনার চেষ্টা করাই শ্রেয়। হারভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, যারা দীর্ঘদিন রাত জেগে কাজ করেন, তারা নিশাচর হয়ে পড়েন এবং শরীর ধীরে ধীরে ভেঙে যেতে শুরু করে। এতে শুধু কর্মক্ষমতা কমে না, আয়ুও হ্রাস পায়।
প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুললে ঘুমের সময়কাল নিয়মিত হয় এবং শরীর অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। চা ও কফির মতো ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় ঘুমের আগে অন্তত ১২ ঘণ্টা আগে গ্রহণ বন্ধ করা উচিত, কারণ এদের প্রভাব শরীরে দীর্ঘস্থায়ী হয়। এছাড়া মোবাইল, ল্যাপটপ কিংবা কম্পিউটারের মতো স্ক্রিনযুক্ত ডিভাইস ব্যবহারে সংযম প্রয়োজন।
ঘুমের সমস্যা দূর করতে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনা অত্যন্ত কার্যকর হতে পারে। ম্যাগনেশিয়ামযুক্ত খাবার যেমন—ডার্ক চকলেট, বাদাম, অ্যাভোকাডো স্নায়ু শিথিল করতে সাহায্য করে। পাশাপাশি মেলাটোনিনযুক্ত খাবার যেমন—টমেটো, শসা, ব্রোকলি, সরিষা, আখরুট, বেদানা ইত্যাদি ঘুম গভীর ও দীর্ঘস্থায়ী করতে কার্যকর ভূমিকা রাখে।
একটানা ঘুমের অভাব শরীর ও মনের ওপর যে ভয়াবহ প্রভাব ফেলতে পারে, তা বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত। তাই স্বাভাবিক জীবন যাপনের জন্য ঘুমকে অগ্রাধিকার দেওয়া জরুরি। সময় মতো ঘুমানো, প্রযুক্তি ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ এবং সঠিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলার মাধ্যমে অনিদ্রা দূর করে ফিরিয়ে আনতে পারেন শরীর ও মনে প্রশান্তি।
তথ্যসূত্র: দৈনিক জনকণ্ঠ
 
পিডিএফ নিউজ ২৪ ঘণ্টা বাংলার খবর